Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, সমাজসেব-রাজনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রতিভাবান ও নিবেদিতপ্রাণ লোকান্তরিত মানুষ স্ব স্ব অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন৷ এক কালের বরেন্দ্রভূমির মধ্যমণি একালের বৃহত্তর রাজশাহী জেলা৷ এই রাজশাহীতে গড়ে উঠেছে রামপুর-বোয়ালিয়া নামের বৃহৎ দু’টি গ্রামের সমন্বয়ে প্রথমে থানা, পরে জেলা শহর রাজশাহী৷ অতি দ্রুত রাজশাহী একটি পূর্ণাঙ্গ শহরের রূপলাভ করে৷ রাজশাহী শহরে অত্যল্পকালেই রাজা-জমিদার, ভূস্বামী, ব্যবহারজীবী, শিক্ষক প্রমুখ বিদ্যোৎসাহী সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিপ্রেমী অভিজাত সম্প্রদায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং মুক্তহস্ত দানে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার প্রতিষ্ঠানসহ জনহিতৈষণামূলক সংগঠন গড়ে উঠতে শুরু করে৷ তাঁদের ভিতর থেকে কতিপয় গুণী মানুষের জীবনকথা তুলে ধরা হলো৷

 শহীদ এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান 

বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতীয় নেতা এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান প্রচন্ড শক্তি নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে আবির্ভূত হয়েছিলেন৷ শহীদ এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান রাজশাহীর এক বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান৷ তিনি পরিবারের প্রথম সন্তান ছিলেন৷ দাদি আদর করে তাঁর ডাক নাম রাখেন ‘হেনা’৷ তিনি ১৯২৩ সালে ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন৷ বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের পিতা আব্দুল হামিদ মিয়া রাজশাহীর একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক ছিলেন৷ তিনি অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন৷ ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন৷ এই সময়েই কামারুজ্জামান প্রবল শক্তি নিয়ে রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হিসাবে তিনি ১৯৬২’র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ‘৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন ও সবশেষে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ কোনটাতেই তিনি পিছিয়ে থাকেননি৷ ১৯৬২ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন তিনি কোন নির্বাচনেই হারেননি৷ ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সম্মিলিত বিরোধী দলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন বৈষম্যের বিষয়ে তিনি সোচচার হন৷ ‘৭১ এর ৮ই মার্চ তিনি কারফিউ প্রত্যাহারের জন্য পত্রিকায় বিবৃতি দেন৷ ১১ মার্চ রাজশাহীর ভূবনমোহন পার্কে এক বিশাল জনসভায় ঘোষণা দেন স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে৷ এই সভায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের টেপ বাজানো হয়৷ ‘৭১ এর ১৭ এপ্রিল তিনি মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কামারুজ্জামান শপথ গ্রহণ করেন৷ তিনি সে সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ ‘৭৫ এর ৩রা নভেম্বর রাতে জাতীয় চার নেতা নির্মমভাবে ঢাকা জেলখানার অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন ৷ এই চার নেতার একজন হচেছন এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান (হেনা)৷


 


 

 কুমার শরৎকুমার রায় 

কুমার শরৎ কুমার রায়ের জন্ম ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে দিঘাপাতিয়ার (নাটোর) রাজবংশে৷ তখন শরৎকুমার অগ্রজ রাজা প্রমদানাথ রায় প্রদত্ত জমিতে নিজে থেকে ৬৩,০০০/- টাকা ব্যযে গৌড়ের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে অপূর্ব শিল্প সুষমামন্ডিত জাদুঘর ভবন নির্মাণ করেন৷ জানা যায়, এ ভবনের নকশা কুমার স্বয়ং নিজেই তৈরি করেছিলেন৷ আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হলে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম শরৎকুমার নিজ অর্থানুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকরের তত্ত্বাবধানে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন কাজের সূত্রপাত ঘটান৷ তিনি নিজ ব্যয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’র পক্ষ থেকে প্রকাশ করেছেন এবং তার অধিকাংশের ব্যয়ভার বহন করেছেন৷ এছাড়াও তিনি পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘রাজশাহী এসোসিয়েশন’, ‘রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার’, ‘রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি’, ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’, ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনী’, ‘ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ’ প্রভৃতি জনহিতৈষণামূলক প্রতিষ্ঠানে নানাপদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল, মোতাবেক ২৯ চৈত্র ১৩৫২ খ্র্রিস্টাব্দে এই মহৎপ্রাণ বাঙালি শেস নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ 

 অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় 

রাজশাহী এসোসিয়েশনের অন্যতম সম্পাদক ছিলেন খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ও ব্যবহারজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়৷ তাঁর জন্ম ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১লা মার্চ তারিখে কুষ্টিয়া (তৎকালীন নদীয়া) জেলার শিমুলিয়া গ্রামে৷ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়’র প্রধান কীর্তি ‘সিরাজদ্দৌলা’৷ ৭০ বছর বয়সে এই মহৎ প্রাণ বাঙালি মনীষার মহাপ্রয়াণ ঘটে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফ্রেব্রুয়ারি তারিখে৷

 যদুনাথ সরকার 

কৃতবিদ্য ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের জন্ম ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার কড়চমারিয়া গ্রামে৷ ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইতিহাস ও ইংরেজি সাহিত্য এই দুটি বিষয়ে অনার্স সহ বিএ পাশ করেন এবং ৯০% নম্বর নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমএ পাশ করেন৷ এ সময় তিনি ‘প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ’ স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বর্ণপদক সহ দশ হাজার টাকা বৃত্তি লাভ করেন৷ প্রেসিডেন্সি কলেজে তার প্রথম কর্মস্থল নির্ধারিত হয় এবং ১৯২৬ খ্রিস্টাবেদ্দ তিনি পাটনা কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন৷ যদুনাথ সরকার তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে বিরল সম্মাননা অর্জন করেছিলেন৷ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ সরকার তাঁকে নাইটহুড উপাধি এবং যথাক্রমে ১৯৩৬ এবং ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ও পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট উপাধী প্রদান করে৷ আচার্য যদুনাথ সরকার ৮৮ বৎসর বয়সে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে তারিখে কলকাতায় পরলোক গমন করেন৷

 রমাপ্রসাদ চন্দ 

রমাপ্রসাদের জন্ম ১৮৭৩ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার ইতিহাস প্রশিদ্ধ বিক্রমপুর পরগণার শ্রীধরখোলা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত ডাফ কলেজ থেকে ৱাতক হন ১৮৯৬ সালে৷ ১৯০১ সালে তিনি হিন্দু স্কুলে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগদান করেন৷ ১৯০৫ সালে তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে বদলি হয়ে আসেন এবং ১৯১৭ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে কর্মরত ছিলেন৷ তিনি ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ইতিহাস এবং সংস্কতি বিভাগে লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন৷ এর কিছুকাল পরে তিনি নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন৷ ১৯২১ সালে কলকাতা জাদুঘরের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৩২ সাল পর্যন্ত নিযুক্ত ছিলেন৷ রমাপ্রসাদ তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯২৪ সালে লাভ করেন সরকার প্রদত্ত ‘রায়বাহাদুর’ খেতাব৷ ১৯৪২ সালের ২৮ মে তারিখে এই অনলস সাধকের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে৷

 রাধাগোবিন্দ বসাক 

 

(জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৮৮৫, মৃত্যু ১০ ডিসেম্বর ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ) এই শতাব্দীর গোড়ার দিকে যে ক’জন বাঙালি মনীষী বাংলার ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, ধ্রুপদীভাষা ও ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে প্রবাদ পুরুষ হবার বিরল সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন-রাধাগোবিন্দ বসাক ছিলেন তাঁদেরই একজন৷ তিনি ‘কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র’ প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন৷ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের এটিই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ৷ কলকাতার সংস্কৃত কলেজ ‘বিদ্যাবাচষপতি’ এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করেন৷ ১৯৬৫ সালের ১৫ আগস্ট ভারত সরকার তাঁকে সর্বোচচ রাষ্ট্রপতির পুরস্কার প্রদান করেন৷ 

 মৌলবী শামসুদ্দীন আহমদ 

 

উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলমান খ্যাতিমান প্রত্নকলাবিদ ও ঐতিহাসিক শামসুদ্দীন আহমেদের জন্ম ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার দেওয়ানপাড়া গ্রামে৷ ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের তিনি প্রথম মুসলমান, যিনি সুপারিনটেনডেন্ট হবার বিরল সৌভাগ্য লাভ করেন৷ তিনি রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন এবং কিছুকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন৷ এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তি ১৯৮৭ সালের ৯ জুন তারিখে ১০৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন৷

 মুখলেসুর রহমান 

নিরলস জ্ঞান-সাধক অধ্যাপক মুখলেসুর রহমানের জন্ম ১৯২৪ সালের ১লা ফ্রেব্রুয়ারি তারিখে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দের মুগবেলাই গ্রামে৷ ১৯৫০ সালে তিনি রাজশাহী কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির লেকচারার নিযুক্ত হন এবং এ চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন৷ তিনি যথাক্রমে ১৯৭৪ ও ১৯৮২ সালে বরেন্দ্র যাদুঘরের পরিচালক ও প্রফেসর অব আর্টহিস্ট্রি নিযুক্ত হন৷ এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক, প্রত্নকলাবিদ ১৯৯৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন৷ 

কবি সাহিত্যিক 

নরোত্তম দাস ঠাকুর

নরোত্তম দাস ঠাকুর (দত্ত) খ্রিস্ট্রীয় ষোড়শ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে রাজশাহীর অদূরবর্তী প্রেমতলীর পদ্মাতীরস্থ গোপালপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন৷ নরোত্তম ভক্তিশ্রাস্ত্র গ্রন্থ ছাড়াও অনেক পদ রচনা করেছেন৷ প্রায় সমস্ত বৈষ্ণব পদসংকলন গ্রন্থে পদকল্পতরু, পদামৃত সমুদ্র, গৌর পদতরঙ্গিনী, বৈষ্ণবপদ সঞ্চয়ন, বৈষ্ণব পদাবলী, মধ্যযুগের বাংলা গীতি কবিতা প্রভৃতিতে নরোত্তমের পদসমূহ সংগৃহীত হয়েছে৷

কবি শুকুর মাহমুদ

কবি শুকুর মাহমুদ ছিলেন মধ্যযুগের বাংলার নাথ সাহিত্য ধারার সম্ভবত শেষ কবি৷ কবি শুকুর মাহমুদের জন্ম সাল ১৬৬০ কিংবা তারও কিছু পূর্বে৷ রাজশাহী শহরের অনতিদূরে সিন্দুর কুসুমী গ্রামে কবির বাস্তুভিটার নির্দশন আজও বিদ্যমান৷

কৃষ্ণেন্দ্র রায়

বঙ্কিম চন্দ্রের সমকালীন রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায় উত্তরবঙ্গের সাহিত্য সাধকদের মধ্যে ছিলেন প্রতিভাধর সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব৷ রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৮ সালে বর্তমান নাটোর জেলার খাজুরা গ্রামে এক বিখ্যাত বরেন্দ্রী ব্রাহ্মণ পরিবারে৷ মাত্র এগার বছর বয়সে রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায় দত্তক পুত্ররূপে গৃহীত হন বলিহারের রাজ পরিবারে৷ সমাজ থেকে কুপ্রথা দূরীকরণে তিনি নানাভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতেন৷ ১৮৭২ সালে ‘রাজশাহী এসোসিয়েশন’ গঠিত হলে এর কর্মকান্ডের সাথে তিনি সংযুক্ত হয়ে পড়েন৷ মহারাণী ভিক্টোরিয়ার পঞ্চাশৎবর্ষ উৎসব উপলক্ষে তিনি ‘রাজা বাহাদুর’ উপাধিতে তিনি ভূষিত হন৷ কৃষ্ণেন্দ্র রায় ছিলেন সমাজ সচেতন সাহিত্যিক৷ তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক এবং গীতিকার৷ তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা৷ তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘এখন আসি’ ১৮৭৭ সালে প্রকাশিত হয়৷ তিনি দুই খানি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন৷ এই মহৎ হৃদয় জমিদার সাহিত্যিক কৃষ্ণেন্দ্র রায় ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ২০ বৈশাখ তিনি লোকান্তরিত হন৷

জগদিন্দ্রনাথ রায় 

মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর বাংলা ১২৭৫ সনের ৪ কার্তিক) নাটোরের সন্নিকটে হরিশপুর গ্রামে এক দরিদ্র অথচ সম্বান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতৃদত্ত নাম ব্রজনাথ রায়৷ নাটোরের রাজ পরিবারে দত্তকপুত্র হিসেবে গৃহীত হবার পর তার নাম রাখা হয় জগদিন্দ্রনাথ রায়৷ কথিত আছে যে, তিনি ৮ বৎসর বয়সে জগদিন্দ্রনাথ নাটোরের কাছে লাট বাহাদুরের জংলী ছাউনিতে অন্যান্যের সঙ্গে উপস্থিত হলে লাট বাহাদুর তাঁকে দেখে মুগ্ধ হন এবং দরবারে যথোপযুক্ত আসনে তাঁকে মর্যাদা দেন৷ বালার তদানন্তীন লেফটেন্যান্ট গভর্ণর ১৮৭৮ সালে ডাক বাংলার ছাউনিতে জগদিন্দ্রনাথকে ‘মহারাজা’ খেতাবে ভূষিত করেন৷

রজনীকান্ত সেন

রজনীকান্ত সেন বাংলা ১২৭২ সালের ১২ই শ্রাবণ (২৬ জুলাই, ১৮৬৫ খ্রিঃ) বুধবার পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে বৈদ্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি বাংলা সাহিত্যে ও সঙ্গীত জগতের অন্যতম সাধক কবি ও গীতিকার ছিলেন৷

মির্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী

মির্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর থানার আলিয়াবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পূর্বপুরুষ মোহাম্মদ আজম পারস্যের ইস্পাহান নগরীর বাসিন্দা ছিলেন৷ মির্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী একজন সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব হিসেবে রাজশাহীর তথা বঙ্গের সমাজ-জীবনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন৷

রাজা ও জমিদার

রাণী ভবানী 

রাজা রামকান্তের স্ত্রী ছিলেন রাণী ভবানী৷ তার জন্ম আনুমানিক ১১২২ বাংলা সনে৷ পিতা আত্মারাম চৌধুরী এবং মাতা জয়দূর্গা৷ রাণী ভবানী ১৭৪৮ খ্রিঃ থেকে ১৮০২ খ্রিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৪ বৎসর জমিদারী পরিচালনা করেন৷ দান, ধ্যান, শিক্ষা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চিকিৎসা ও ধর্মীয় কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রাণী ভবানী সরকারী কোন খেতাব না পেলেও তাঁর প্রজারা তাঁকে ‘মহারাণী’ নামে আখ্যায়িত করেন৷

প্রমথনাথ রায়

রাজশাহী এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রায় বাহাদুর প্রমথনাথ রায় ছিলেন অন্যতম৷ তিনি ১৮৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷ রাজশাহী এসোসিয়েশন ও রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দেড়লক্ষ টাকা দান করেন৷ তিনি রামপুর বোয়ালিয়ায় একটি চিকিৎসালয় এবং একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৮৭১ সালে তিনি ‘রাজাবাহাদুর’ খেতাব পান ১৮৭৭ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৮৮৩ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন৷

শরৎসুন্দরী দেবী

মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবী ১২৫৬ বঙ্গাব্দের ২০ আশ্বিন পুঠিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন৷ সমকালীন সমাজরীতি অনুযায়ী অতি অল্প বয়সে শরৎসুন্দরীর বিয়ে হয় পুঠিয়া রাজবংশের ‘পাঁচআনি’ শাখার বড় তরফের রাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ এর সাথে৷ শরৎসুন্দরী ছিলেন ভিন্নধর্মী জমিদার৷ বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহ্যি ও জনশ্রুতিতে বাংলার জমিদারবর্গ অত্যাচারী, প্রজাপীড়ক, শোষক হিসেবেই চিত্রিত৷ কিন্তু এঁদের মধ্যে দু’চারজন ব্যতিক্রমধর্মী প্রজাদরদী জমিদারদের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়৷ শরৎসুন্দরী তাঁদেরই একজন৷

হেমন্তকুমারী দেবী

 

মহারাণী শরৎসুন্দরী ১২৯৩ সালে মৃত্যুবরণ করলে হেমন্তকুমারী জমিদারী লাভ করেন৷ তিনি ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন৷ তিনি বিভিন্ন দান-ধ্যান ও জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন৷ রাজশাহী শহরে তিনি একটি ছাত্রাবাস, একটি সংস্কৃত কলেজ এবং মহারাণী হেমন্তকুমারী ওয়াটার ওয়ার্কস এ তিনি বহু অর্থ দান করেন৷ জনকল্যাণকর কাজের জন্য হেমন্তকুমারী ‘মহারাণী’ খেতাব পেয়েছিলেন৷

চন্দ্রশেখরেশ্বর রায়

তাহিরপুর জমিদার বংশের অন্যতম পুসুষ চন্দ্রশেখরেশ্বর৷ তিনি ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ‘সেবাব্রত’ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন৷ এই প্রতিষ্ঠান থেকে গরীবদের জন্য খাবার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়৷ তিনি তাহেরপুরে রথযাত্রা ও মেলার প্রবর্তন করেন৷ এছাড়াও তিনি একটি মাইনর স্কুল ও একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন৷ 

শশিশেখরেশ্বর রায়

শশিশেখরেশ্বর রায় একজন প্রজাদরদী জমিদার ছিলেন৷ মাত্র ২১ বৎসর বয়সে তিনি জমিদারি পরিচালনার ভার পান৷ কৃষির উন্নয়নের জন্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি এবঙ উন্নতমানের বীজ তিনি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন৷ ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দেন৷ ১৮৯৬ সালে তিনি ‘রাজাবাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত হন৷

 

হরনাথ রায়

হরনাথ ছিলেন দুবলহাটি জমিদার বংশের দত্তক সন্তান৷ নানা কারণে হরনাথের জমিদারি আমল বিখ্যাত৷ তিনি জমিদারির আয়তন বৃদ্ধি করেন৷ তাঁর আমলে এই জমিদারি রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, ফরিদপুর এবং সিলেট এই পাঁচটি জেলায় বিস্তৃত হয়৷ হরনাথের কার্যকলাপে সন্তুষ্ট হয়ে বৃটিশ সরকার তাঁকে ১৮৭৫ সালে ‘রাজা’ এবং ১৮৭৭ সালে ‘রাজাবাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন৷

রাজকুমার সরকার

রাজকুমার দীর্ঘকাল রাজশাহী এসোসিয়েশনের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী ছিলেন এবং একজন ব্যতিক্রমধর্মী জমিদার ছিলেন৷ তিনি নিজ ব্যয়ে স্বগ্রামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন৷ রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর যথেষ্ট ভূমি ছিল৷ তিনি রাজশাহী ধর্মসভার একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন৷ বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে রাজকুমার রাজশাহী পিপল্‌স এসোসিয়েশন নামে একটি রাজনৈতিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন৷

রাজনীতিক ও সমাজসেবক

হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার

 

হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৮ সালে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানার অধীন ভেলনা গ্রামে এক নিম্ন মাধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে৷ রাজশাহীর তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার সি.এইচ. নেলসন সাহেবের সহায়তায় ইটের ব্যবসায় তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং জমিদারি ও তালুক সম্পত্তির মালিকানা লাভে সমর্থ হন৷ তিনি একজন বিত্তবান ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার পর ক্রমান্বয়ে সমাজ কল্যাণে এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন৷ তিনি দুবার অবিভক্ত বাংলার ‘লেজিসলেটিভ কাউন্সিল এর সদস্য (এমএলসি) নির্বাচিত হন৷ এই খ্যাতনামা ব্যক্তির কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে ১৯৩৬ সালের আগস্ট মাসে৷

এমাদউদ্দীন আহমদ

সমাজহিতৈষী রাজনীতিবিদ এমাদউদ্দীন আহমদ ১৮৭৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ রাজশাহী জজ কোর্টে আইন ব্যবসায় স্বল্পকালের মধ্যেই অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন৷ তিনি ছিলেন রাজশাহী জেলা বোর্ডের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং রাজশাহী পৌরসভার নির্বাচিত প্রথম মুসলমান বেসরকারি চেয়ারম্যান৷ অসাধারণ কর্মদক্ষতা এবং ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯২২ সালে খানবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন৷ ১৯৩০ সালে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন পরে ডেপুটি স্পিকার এর পদ লাভ করেন৷ ১৯৩৬ সালের ৭ মে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷

আহসান উল্লাহ মোল্লা

আহসান উল্লাহ মোল্লা বর্তমান নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার অন্তর্গত জাত আমরুল গ্রামে ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি একজন জমিদার, সফল ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন৷ তাঁর পাটের ব্যবসা সুদূর লন্ডন ও ডান্ডি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল৷ এই সমাজ সেবক রাজনীতিবিদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে আত্রাইতে তাঁর নামানুসারে স্থাপিত হয় আহসান উল্লাহ মেমোরিয়াল উচচ বিদ্যালয় এবং আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন (আহসানগঞ্জ) ও আত্রাই ডাকঘরের নামকরণ করা হয়েছে৷

আশরাফ আলী খান চৌধুরী

বর্তমান নাটোরের কৃতী সন্তান ব্যারিস্টার আশরাফ আলী খান চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭৮ সালে মুসলিম জমিদার খান চৌধুরী পরিবারে৷ তিনি ১৮৩৬ সালে ফারসির পরিবর্তে রাজভাষারূপে গ্রহণ করেন ইংরেজী ভাষা৷ ১৯১২ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করে কোলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন৷ কিছুকাল তিনি কলকাতা হাইকোর্টের ডেপুটি লিগ্যাল রিমেমব্রান্সার (ডিএলআর) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৩৭ সালে তিনি নাটোর থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷ ১৯৪১ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷

ইদরিস আহমদ

রাজনীতিক ইদরিস আহমদ ১৮৯৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার দাদনচক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি ১৯২০ সালে দাদনচক গরীব সহায় সিনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন৷ বর্তমানে তা সরকারী আদিনা ফজলুল হক কলেজ নামে পরিচিত৷

আব্দুল হামিদ মিয়া

আবদুল হামিদের জন্ম রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জে জমিদার হাজি লাল মোহাম্মদ এর পরিবারে৷ তিনি পূর্বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন৷ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম.এইচ.এম. কামারুজ্জামান ছিলেন তাঁর সুযোগ্য পুত্র৷ তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে ১৯৭৬ সালে৷

মাদার বখ্‌শ

মাদার বখশ জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নাটোর জেলার সিংড়া থানার স্থাপনদিঘী গ্রামে৷ ১৯২৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাসে এম.এ এবং ১৯২৯ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন৷ ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন৷ ১৯৫০ সালে তিনি রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন৷ ১৯৫১ সালে রাজশাহী শহরে তিনিই প্রথম রিক্সা চালু করেন৷ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ ১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি পরলোক গমন করেন৷

কাজী আবদুল মজিদ

কাজী আবদুল মজিদ ১৯০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নাটোর শহরের আলাইপুরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি দু’বার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷